ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশকে (টিআইবি) ‘বিএনপির দালাল’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, তাদের বক্তব্য একপেশে। একটা পক্ষের ওকালতি করে। সরকারের বিরুদ্ধে তারা যা খুশি বলে। এক কথায় সরকার বিরোধী।
আজ বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ডাকা এক সাংবাদিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
গতকাল বুধবার 'দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া ট্র্যাকিং' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করে টিআইবি। এতে নির্বাচন নিয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। সেখানে সংস্থাটি বলে, এবারের নির্বাচন অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়নি। এ নির্বাচন দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত। টিআইবি বলে, ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক দেখাতে নিজ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়া হলেও বেশির ভাগ আসনে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়নি। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল না ২৪১টি আসনের ভোট।
আজ টিআইবির বক্তব্যের বিষয়েই প্রতিক্রিয়া জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘টিআইবি বলেছিল, পদ্মা সেতু অসম্ভব, এটা কিন্তু টিআইবির বক্তব্য। সিপিডিও একই মন্তব্য করেছিল। কিছু কিছু বিষয় আছে যেটা আমরা জবাব দিই রাজনৈতিকভাবে, উত্তর আমরা দিই দেশের মানুষের পারসেপশন ভিন্ন খাতে না যায় সে জন্য কথা বলি। রাজনৈতিকভাবে আমরা কথাবার্তা বলি। সবকিছু আইনগতভাবে হয় না, রাজনীতি অন্তত হয়।’
টিআইবির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা একপেশে পক্ষপাতিত্ব করে সেটা বলছি, সব ব্যাপারে কি মামলা ঠুকে দিতে হবে?
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা একটা রাজনৈতিক দল, আমাদের পার্টির এই নির্বাচন কে সামনে রেখে একটা কৌশল ছিল, রাজনীতিতে রণকৌশল থাকবেই, আমরা একটা রণকৌশল অবলম্বন করেছি। ভেতরে দ্বন্দ্ব, অন্তর কলহ এগুলো আওয়ামী লীগ নতুন হচ্ছে এমন না। সব রাজনৈতিক দলেরই এই সব ব্যাপারে সুখকর নয়। এটার সমাধান আবার সেই দলই করে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, একাধারে ১৫ বছর আমরা ক্ষমতায়। এসবের মধ্যেই তো সবকিছু মোকাবিলা করে, এটাও আমাদের চলার পথে চ্যালেঞ্জ। এটা আমরা দলীয়ভাবে অবশ্যই মোকাবিলা করব। আমাদের নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রী এই প্রশ্নে কোনো বিরোধ নেই। তার নেতৃত্ব আমাদের পার্টি যত সমস্যায় থাকুক, আমরা সবাই কিন্তু ঐক্যবদ্ধ। আমাদের সুবিধাটা কিন্তু এখানেই। যেখানে আমাদের একজন নেতা আছেন যার প্রশ্নে কোনো বিরোধ নেই।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘আমরা বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নিব, আমরা এই ষড়যন্ত্র, ষড়যন্ত্র না বলে এই সব ব্যাপারে আমরা বাস্তবমুখী কর্মসূচি নিব। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সকলকে কাজ করতে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় আমরা আমাদের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে শুরু করেছি।’
বাংলাদেশে গণতন্ত্র অপরিহার্য কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ক্ষমতায় যাওয়া, ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়া, এর পদ্ধতির নাম পলিটিকস। পলিটিকস কীভাবে পরিচালিত হবে এর উত্তম ব্যবস্থা, বিশ্ব স্বীকৃত গণতন্ত্র। কাজেই এর কোনো বিকল্প নেই।’
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বতন্ত্র ও দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে কোন্দল বিষয়ে তিনি বলেন, দু-একজনের ভাষাটা আমাদের নেত্রীরও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তিনি প্রকাশ্যে কথাও বলেছেন। আমিও বলতে চাই, তাদের সঙ্গে মতবিরোধ মিটিয়ে ঐক্য গড়ে তোলা হবে। আমাদের দল নিয়ে আপনাদের এত মাথা ব্যথা কেন? আমাদের দল তো এগিয়ে যাচ্ছে। একাধারে ১৫ বছর আমরা পাওয়ারে। আমরা সবকিছু মোকাবিলা করে, চলার পথে এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ। আমাদের নেতৃত্ব, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রশ্নে আমাদের কোনো দ্বিধা নেই, বিরোধ নেই। আওয়ামী লীগের সুবিধাটা ওখানেই।
বিএনপি'র আন্দোলন সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির বর্তমান অবস্থা কবি জসিম উদ্দিনের কবর কবিতার মতো, "তার পরে এই শূন্য জীবনে যত কাটিয়াছি পাড়ি, যেখানে যাহারে জড়ায়ে ধরেছি সেই চলে গেছে ছাড়ি।’
সংসদে কারা বিরোধী দল হচ্ছে— এই প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, যে বিরোধিতা করবে, সেই তো বিরোধী দল। পার্লামেন্ট থাকলে অপজিশন থাকবে। অপজিশন সম্পর্কে জানতে সংসদ বসা পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করার কথাও জানান তিনি।